গোলাপগঞ্জে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাওর পারের মানুষ, রয়েছে খাদ্য সংকটও

73

গোলাপগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
বন্যায় পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত গোলাপগঞ্জের হাওর পল্লীর মানুষ। খাদ্য সংকটে থাকা সর্বস্বান্ত হাওর পারের মানুষের এখন নতুন উপদ্রব রোগবালাই। হাওর তীরের কৃষি ও মৎস্যজীবী পরিবারগুলো আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, আমাশয়, চর্মরোগ, কৃমি ও পেট ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগবালাইয়ে। ঘরে তিন বেলা দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা যাদের নেই তাদের রোগ তাড়াতে ওষুধ কেনার সাধ্য কোথায়। তাই বলতে গেলে এখন নিত্যদিন রোগের সঙ্গে আপোষ করেই তাদের চলা। গেল  চৈত্র ও বর্তমান আষাঢ় মাসের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার পর এখন এমন স্বাস্থ্য অবস্থা হাওর তীরবর্তী গ্রামগুলোর কৃষি ও মৎস্যজীবীদের। টাকা নেই তাই শরীরও ভালো নেই। রোগ সারাতে মনোবল আর ধৈর্যই তাদের একমাত্র পুঁজি। মাঝে মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণায় অধৈর্য হলে রোগ সারাতে উপজেলা হাসপাতালে এলেও সেখানে মিলে না ডাক্তার কিংবা ওষুধ। আবার অনেক সময় ডাক্তার পাওয়া গেলেও তাদের রূঢ় আচরণে মনে হয় শরীরে রোগ থাকাই ভালো। গ্রাম থেকে এত দূরে গিয়েও যদি ডাক্তার পেলে ওষুধ না পাই; কিংবা ডাক্তারদের অবহেলার শিকার হতে হয় তাহলে ওখানে চিকিৎসা নিতে আসবো কেন। ক্ষোভে দুঃখে এমনটিই জানালেন হাওর তীরের ক্ষতিগ্রস্ত রোগাক্রান্ত কৃষি ও মৎস্যজীবীরা। জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু এসব সরকারি হাসপাতালে রয়েছে ডাক্তার, ওষুধ ও লোকবলসহ নানা সমস্যা ও সংকট। আর যা আছে তারও সদ্ব্যবহার হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীদের তরফে রয়েছে নানা অভিযোগ। শরিফগঞ্জ ইউপির হাকালুকি হাওর ও কালীকৃষ্ণপুর গ্রামের কবির আহমদ ও আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, এ বছরের অকাল বন্যায় সব সম্পদ হারিয়ে হাওর পারের মানুষ অনেকটা নিঃস্ব। নোংরা পানিতেই হাত-পা ধোয়া ও গোসল করতে হচ্ছে। তার সাথে রয়েছে রোগবালাই। রোগ সারাতে মনোবল আর ধৈর্যই তাদের একমাত্র পুঁজি। কয়েকদিন আগে ডাক্তাররা বন্যা দুর্গত এলাকা ঘুরে গেলেও কোন ধরণের ঔষধপত্র দেননি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে ডাক্তার শরির চেক’আপ করে বাহির থেকে ঔষধ খেতে বলেন। সেই হাকালুকিরই নেই সেই আগের অবস্থা।
সরেজমিন  উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকার ৬টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, হাওর তীরের অধিকাংশ ঘরবাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা নেই বললেই চলে। দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত প্রতিটি শিশুই পুষ্টিহীনতায় জীর্ণশীর্ণ। এমন নানা কারণসহ এ বছর অকাল বন্যায় এখন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাকালুকি হাওর তীরের কৃষিজীবী ও জেলেপলীর বাসিন্দারা। এখন প্রতিনিয়তই তারা আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, আমাশয়, চর্মরোগ, কৃমি ও পেটব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে। উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউনিয়ন, আমুড়া, বুধবারীবাজার, ভাদেশ্বর, বাদেপাশা,বাঘা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চলছে এমন দৈন্যদশা। বিশেষ করে জেলেপলী হিসেবে পরিচিত শরিফগঞ্জ ও ভাদেশ্বর ইউনিয়ন। এসব গ্রামের অনেকের রান্নাঘরের পাশে দেখা যায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ আর অস্বাস্থ’্যকর খোলা পায়খানা। খোলা ড্রেন দিয়ে ময়লা আবর্জনা পুকুরগুলোতে এসে পড়ছে। আর ওই নোংরা পানিতেই হাত-পা ধোয়া, নিজেদের গোসল ছাড়াও গোসল সারাচ্ছেন গরু মহিষেরও। গৃহিণীরা গৃহস্থালির আসাবাবপত্র, কাপড়সহ বাসনপত্র আর খাবারের জিনিসপত্রও ধুচ্ছেন ওই পুকুরেই। স্যাঁতসেঁতে কর্দমাক্ত আর দুর্গন্ধময় পরিবেশ পুকুর জুড়ে। পশ্চিম আমুড়া ইউপির ঘাগুয়া গ্রামের আব্দুর রব ও বশির মিয়া বলেন, এবারের বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ী এখনো পানিতে নিমজ্জিত। ঘরবাড়ীতে পানি উঠায় টয়লেট ও টয়লেটের টাংকি সবকিছু পানিতে এক হয়ে গেছে। এবারের বন্যায় ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ’ত রয়েছেই। বাদেপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, আমিসহ আমার ইউনিয়নের প্রায়ই মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত। এখনও কোন ধরণের মেডিকেল টিম আমার ইউনিয়নে আসেনি। তবে দু’একদিনের মধ্যে আসার কথা রয়েছে।
শরিফগঞ্জ ইসলামপুর গ্রামের আবুল মিয়া বলেন, টাকা নেই তাই শরীরও ভালো নেই। বন্যায় সব হারিয়ে এখন দিশেহারা। রোগ সারাতে মনোবল আর ধৈর্যই আমাদের শেষ পুঁজি। মাঝে মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণায় অধৈর্য হয়ে রোগ সারাতে উপজেলা হাসপাতালে গেলেও সেখানে মিলে না ডাক্তার কিংবা ওষুধ। আবার অনেক সময় ডাক্তার পাওয়া গেলেও তাদের রূঢ় আচরণে মনে হয় শরীরে রোগ থাকাই ভালো। গ্রাম থেকে এত দূরে গিয়েও যদি ডাক্তার পেলে ওষুধ না পাই; কিংবা ডাক্তারদের অবহেলার শিকার হতে হয় তাহলে ওখানে চিকিৎসা নিতে আসবো কেন। এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তউহিদ আহমদের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন,বন্যা দুর্গত এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে টিম রেডি করে রাখা হয়েছে। তারা বন্যা দুর্গত এলাকায় নিয়মিত খবর রাখছে। পানি বাহিত রোগের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পানিবাহীত রোগের কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তিনি আরো বলেন ডায়রীয়া আক্রান্তদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে প্রচুর স্যালাইন পৌছে দেয়া হয়েছে।