জামালগঞ্জের ফেনারবাকে কর্মসৃজনের ২০ লক্ষ টাকার প্রকল্পই পানির নীচে

40

মো: নিজাম নূর, জামালগঞ্জ থেকে :
জামালগঞ্জে ৪০ দিনের কর্মসৃজনে সাতকাহন, বেশীর ভাগ প্রকল্পই পানির নীচে, বাকি গুলিতে নামে মাত্র কাজ হয়েছে। পাগনার হাওরের ফসলহানীর পর এবার কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকাও তুলে নিজেদের মধ্যে অতীতের মত ভাগবাটোয়ারা করার চিন্তা করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প চেয়ারম্যানরা। এরই ধারাবাহিকতায় ফেনারবাক ইউনিয়নের ২০ লক্ষ টাকারও অধিক পানির নীচে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ পানির নীচে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে তছরফ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। গেল ২৩ ই এপ্্িরল সুনামগঞ্জের সর্বশেষ পাগনার হাওরটির বাধ ভেঙ্গে ফসিলে তলিয়ে যায়,আর অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর ২য় পর্যায়ের অনুমোদন হয় ফসল ডুবির ৪ দিন পর। ফেনারবাক ইউনিয়নের ৫টি কর্মসৃজন প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে ২৩ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৩৭ জন সুবিধাভোগীর মাধ্যমে। যে সময়ে হাওরের মধ্যে পানি আর অথৈ পানি ঠিক সেই সময়ে ফেনারবাক ইউনিয়নের ২য় পর্যায়ের প্রকল্প গুলি অনুমোদন হয় ২৭শে এপ্্িরল। সরকারীবিধি মোতাবেক  প্রকল্প অনুমোদনের পর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও অধিকাংশ প্রকল্পই পানির নীচে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় ২য় পর্যায়ের বরাদ্দে উদয়পুর গ্রামের সামনের রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্পে ২ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, পশ্চিম ফেনারবাক কবর স্থান হতে হাবিজ উদ্দিনের বাড়ীর যাতায়তের রাস্তায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, রসুলপুর কবর স্থানে মাটি ভরাট ও খুজারগাঁও গ্রামের পশ্চিমের রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্পে ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, মাতারগাঁও সার্বজনিন শশ্মানঘাটে মাটি ভরাট ও বিঞ্চুপুর পুকুর ঘাট হইতে বাজারমুখী রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্পে ৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, আলীপুর (মাতব্বরপুর) আয়না মিয়ার বাড়ী হতে পশ্চিমমুখী রাস্তায় বিভিন্ন ভাঙ্গা মেরামত ও সেলিমগঞ্জ মেইনরোড হতে শরীফপুর রিয়াজউদ্দিনের বাড়ীর সামনের রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্পে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গত শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফেনারবাক ইউনিয়নের মাতারগাও শ্মশানঘাটের প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, মাতারগাঁও গ্রামের সামনে হাওরের মাঝ খানে একটু জায়গা উঁচু জায়গার উপর কিছু মাটি ফেলে রিপিয়ারিং করা হয়েছে,যা বরাদ্দের তুলনায় অতি নগন্য। খুজারগাঁও গ্রামের রাস্তার প্রকল্পে বর্তমানে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি রয়েছে, রসুলপুর কবর স্থানে আংশিক মাটি ফেলা হয়েছে। উদয়পুর গ্রামের সামনের রাস্তায় বর্তমানে ৭ থেকে ৮ ফুট পানি রয়েছে, মাটির কাজ করা তো দূরের কথা রাস্তার উপর দিয়ে বর্তমানে বড় বড় নৌকা চলাচল করছে।
পশ্চিম ফেনারবাক কবরস্থান হতে হাবিজ উদ্দিনের বাড়ীর রাস্তায় যাতায়তে রাস্তায় আংশিক কাজ দেখা গেলে বাকী রাস্তা ডুবন্ত অবস্থায়। আলীপুর(মাতব্বরপুর) আয়না মিয়ার বাড়ী হতে পশ্চিমমুখী রাস্তায় বিভিন্ন ভাঙ্গা মেরামত ২শত ফুট কাজ করিয়েছেন, সেলিমগঞ্জ মেইনরোড হতে শরীফপুর রিয়াজ উদ্দিনের বাড়ীর সামনের রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্পে অর্ধেক কাজ করিয়ে বর্তমানে পানির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে খুজারগাঁও ও রসুলপুরের প্রকল্প চেয়ারম্যান অজিত সরকার বলেন, ইউপি সদস্য বলেন বর্তমানে রাস্তাটি ঠিকই পানির নীচে,পানি আসার আগেই অগ্রিম কাজ করিয়েছি। মাতারগাও শ্মশান ঘাটের প্রকল্প চেয়ারম্যান দীপক তালুকদার বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় লোক দিয়ে দূর থেকে দৈনিক রুজের কামলায় কিছু মাটি ফেলেছি, যা তুলনায় কম, পানি কমলে আরো কিছু কাজ করাবো। পশ্চিম ফেনারবাকের প্রকল্প চেয়ারম্যান মো: ইয়াছিন মিয়া বলেন, আমি কবর স্থান থেকে গ্রামের দিকে কিছু কাজ করেয়েছি, রাস্তায় পানি থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। উদয়পুরের রাস্তার প্রকল্প চেয়ারম্যান ও ফেনারবাকের ইউপি সদস্যা নূরে জান্নাত লিপি বলেন,আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ, আমার স্বামী কাজ করিয়েছে, তিনিই কাজের সমন্ধে ভালো বলতে পারবেন।
আলীপুর ও সেলিমগঞ্জ মেইনরোড হইতে শরীফপুর প্রকল্পের চেয়ারম্যান আসাদ আলী বলেন, আলীপুর ও শরীপুর প্রকল্পের কাজে অর্ধেকের মত কাজ করা হয়েছে,পানির কারনে আপাতত কাজ বন্ধ, পানি কমে গেলে বাকী কাজ করানো হবে।
ফেনারবাকের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার বলেন,কাজ না করার কথা স্বীকার বলেন,পিআইওর সাথে কথা হয়েছে,যেখানে কাজ হয় নাই,সেটা পরিবর্তন করে অন্য স্থানে কাজ করানো হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের কোন অর্থ ছাড় দেওয়া হয়নি, কাজ দেখা হচ্ছে,যে পরিমানে কাজ পাওয়া যাবে সেই পরিমানে বিল প্রদান করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের কাজ দেখা হচ্ছে, যতটুকু কাজ হবে সেই পরিমাণে বিল প্রদান করা হবে। কোন প্রকল্পে অনিয়ম পাওয়া গেলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।