কবিরাজি চিকিৎসার নামে ॥ চাতলাপুর চা বাগানে চা শ্রমিক কন্যা শিশুকে ধর্ষণ

88

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা বাগানে কবিরাজি চিকিৎসা সেবার নামে এক প্রতারক মামাকে মেরে আহত করে বেঁধে রেখে ভাগ্নী এক চা শ্রমিক কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করে। ভোর বেলা একটি চা বাগানের প্লান্টেশন এলাকায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে চা বাগান হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। গত বুধবার  সন্ধ্যায় এ ঘটনাটি ঘটলে সারা রাত শিশুটিকে খোঁজে না পেলেও বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় পার্শ্ববর্তী শমশেরনগর চা বাগানের একটি চা প্লান্টেশন এলাকা থেকে নির্যাতিতা শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
চাতলাপুর চা বাগান সূত্রে জানা যায়, এ চা বাগানের বাউরী টিলার শ্রমিক মতিলাল বাউরীর মেয়ে (১৩) অসুস্থ ছিল। গত বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টায় এক প্রতারক তাদের বাসায় এসে নিজেকে কবিরাজ দাবি করে মেয়েটির চিকিৎসা সেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। শিশুটির তাৎক্ষণিক চিকিসার জন্য চা বাগানের প্লান্টেশন এলাকায় ভৈরবথলী (পূজার স্থান) নিতে হবে বললে প্রতারকের কথায় চা শ্রমিক পরিবার তাকে সাথে দিয়ে দেয়। তবে মেয়েটির সাথে তার মামা পঞ্চম বাউরীকে (৪৫) সাথে দেওয়া হয়। প্রতারক সু-কৌশলে শিশুটিকে ও তার মামাকে সাথে নিয়ে ক্রমান্বয়ে চা বাগানের বেশ গভীরে প্রবেশ করে।
কিছুক্ষণ পর কবিরাজ পরিচয়দানকারী প্রতারক শিশুটিকে ও তার মামাকে দুটি জুস খেতে দেয়। জুস খেয়ে শিশু ও তার মামার ঘুম আসতে শুরু করলে প্রতারক তখনই মামা পঞ্চম বাউরীকে মাথায় আঘাত করে আহত করে শিশুটির ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে রাখে। পরে অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে আরও গভীরে চলে গিয়ে রাতে ধর্ষণ করে পার্শ্ববর্তী শমসেরনগর চা বাগানের একটি প্লান্টেশন এলাকা ফেলে পালিয়ে যায়।
সন্ধ্যার পরও শিশুটি ও তার মামা ফিরছে না দেখে তাদের পরিবারের লোকজন ও চা শ্রমিকরা চাতলাপুর চা বাগানের বিভিন্ন প্লান্টেশন এলাকায় খোঁজে একটি স্থান থেকে আহতাবস্থায় মামা পঞ্চম বাউরীকে উদ্ধার করে। গতকাল ভোর ৬টায় চা শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী শমসেরনগর চা বাগানের একটি প্লান্টেশন এলাকা থেকে গুরুরত অসুস্থ অবস্থায় নির্যাতিতা শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে ক্যামেরিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালে প্রাথমিক সেবা দেওয়া হয়। দুপুরে তাকে দ্রুত মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শিশুটির মা বিপুলা বাউরী এ প্রতিনিধিকে বলেন, তার মেয়েটি বেশ কিছুদিন ধরে নানান রোগে ভোগছিল। বুধবার বিকালে কবিরাজ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাদের ঘরে আসলে মেয়ের উন্নতির কথা ভেবে প্রতারক কবিরাজের কথায় রাজি হয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে তার সাথে চা বাগানের প্লান্টেশন এলাকায় পাঠান। তবে মেয়েকে দেখে রাখতে তার মাকেও সাথে দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যার পরও তারা ফিরছিল না দেখে অনেক খোঁজাখুঁজির পর মেয়ের মামাকে কিছুটা অজ্ঞান ও আহতাবস্থায় উদ্ধার করা গেলে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় মেয়েকে শমসেরনগর চা বাগানের একটি প্লান্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
শরীফপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রাম জনম ভর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,  শিশুটি খুবই অসুস্থ বলে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। প্রতারক কবিরাজকে এর আগে কেউ চাতলাপুর চা বাগান এলাকায় দেখেনি বলেও তিনি জানান।
শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান জুনাব আলীও এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রতারণার ফাঁদে পড়ে চা শ্রমিকের এই অবুঝ শিশু নির্যাতিত হয়েছে। ঘটনাটি কুলাউড়া থানাকে অবহিত করতেও তিনি নির্যাতিতা পরিবারকে বলেছেন। তারা খুবই দরিদ্র ও অসহায় বলে থানায় যেতে পারছে না বলায় তিনি চেয়ারম্যান ওয়ার্ড ইউপি সদস্যকে বলেছেন চা শ্রমিক মতিলালকে নিয়ে থানায় যেতে। এর সমস্ত ব্যয় তিনি বহন করবেন।
শমসেরনগর চা বাগানস্থ ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পরিচালক ডা: আনোয়ারুল হক বলেন, গুরুতর অসুস্থ ও কিছুটা অজ্ঞান অবস্থায় একটি কন্যা শিশু এখানে এসেছিল। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।