ড্রোনম্যান নাবিলের স্বপ্নযাত্রা

34

সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিলের হাত ধরে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ড্রোন তৈরী হয়েছিল। নাবিল তখন Sylhet Drone Man Nabil Pic-1শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের তত্ত্বাবধানে শাবির কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে সফলভাবে ড্রোন তৈরী করে স্বপ্নযাত্রার পথে পা বাড়িয়েছিলেন নাবিল। বর্তমানে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর নাবিলের স্বপ্নযাত্রা চলছেই। সম্প্রতি ভারতে ‘সেকন্ড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সেস ফর কনভারজেন্স অব টেকনোলজি (আইটুসিটি)’-তে গ্রহণ করা হয়েছে।
নাবিলের হাত ধরে দেশে প্রথমবারের মতো ড্রোন তৈরী হওয়ার পর ক্যাম্পাস এবং গণমাধ্যমের কাছে ড্রোনম্যান হিসেবে খ্যাতি পান তিনি। তবে নাবিলের প্রতিভার স্ফূরণ সেই স্কুলজীবনে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালেই। পানির অপচয় রোধে আধুনিক পদ্ধতি শীর্ষক তার প্রকল্পটি তখন জাতীয় বিজ্ঞানমেলায় সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল। হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে পড়ার সময়েও বিজ্ঞান নিয়ে মেতেছিলেন তিনি। ওই সময়ে তার হাত ধরে চোর ধরার যন্ত্র, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, লঞ্চ দুর্ঘটনা রোধের যন্ত্র প্রভৃতি উদ্ভাবিত হয়েছিল।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর সুদৃশ্য একটি ডিজিটাল ঘড়ি তৈরী করে নিজ বিভাগে লাগিয়েছিলেন নাবিল। ঘড়িটি ড. জাফর ইকবালের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর নাবিলের সাথে কথা বলেন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি নাবিলকে। শাবিতে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই ড্রোন তৈরী করে হইচই ফেলে দেন দেশজুড়ে।
এরপর নাবিলের স্বপ্নযাত্রায় যোগ হয়েছে আরো অনেক কিছুই। সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার (বর্তমানে অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর) হিসেবে যোগ দিয়ে গড়ে তুলেন ইনোভেশন ল্যাব। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক রবি কর্মকার, আখলাকুজ্জামান আশিক, শিক্ষার্থী আবদুর রহমান, রাজু মিয়া, স্বজন দেবনাথ, ইনতেজাম আহমেদ প্রিনন, লুৎফুর রহমান শাকিলদের নিয়ে সেই ল্যাবে উদ্ভাবন করে চলেছেন নিত্যনতুন সব যন্ত্র। নাবিলদের হাত ধরে উদ্ভাবিত হয়েছে রাসবেরি পাই ক্লাস্টার কম্পিউটার (এক ধরনের সুপার কম্পিউটার), মনুষ্যবিহীন সাবমেরিন, হেক্সা ও অক্টোকপ্টার, ওয়েদার ইনফর্মার ড্রোন, ব্রেইল রিডার প্রভৃতি।
রেজওয়ানুল হক নাবিল নিজের এই পথচলায় সন্তুষ্ট। তবে যেতে চান আরো বহুদূর। তিনি বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে পথ চলছি, তাতে সন্তুষ্ট। সাফল্য আসছে, কিন্তু পথচলায় অনেক দূর যাওয়ার স্বপ্ন। সেজন্য সহকর্মীদের নিয়ে পরিশ্রম করছি। বর্তমানে কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে আমাদের কাজ চলছে।
নাবিল জানান, সম্প্রতি ভারতে সেকন্ড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সেস ফর কনভারজেন্স অব টেকনোলজি (আইটুসিটি)’-তে ‘ড্রোন গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন উইথ এনহান্সড সেফটি ফিচারস’ শিরোনামে একটি রিসার্চ পেপার উপস্থাপন করেন তিনি (নাবিল), রবি কর্মকার ও আখলাকুজ্জামান আশিক। সেই পেপার আইটুসিটি’তে গ্রহণ করা হয়।
এখানেই শেষ নয়! নাবিলদের উদ্ভাবিত সাবমেরিন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সম্প্রতি নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে নাবিলের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ড্রোন নিয়ে কাজ করতে চায় সেনাবাহিনী। গত বছর সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ডিভিশনে তাদের আমন্ত্রণে গিয়ে ড্রোনের প্রদর্শনী করে এসেছেন নাবিলরা। বিজ্ঞপ্তি