স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে আরো ৩/৪দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি ও অব্যাহত পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল সোমবার সিলেটে নদনদীগুলোর পানি বেড়েছে। এতে সিলেটে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। নতুন করে তলিয়ে গেছে আরো কয়েকটি এলাকা।
এদিকে দক্ষিণ সুরমার ১৪টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যা প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে আজ মঙ্গলবার সিলেট আসছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ৩ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সিলেটে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে টিলা ধসেরও শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি আমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। সুরমার পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি জানান, নদীর পানি তীর উপচে প্রবেশ করায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ছয় উপজেলার সুরমা ও কুশিয়ারা অববাহিকায় নদীর তীরের দুই শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানির নীচে আছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি এলাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, উজানে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে টানা বর্ষণের কারণে সিলেটের কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকে। বর্তমানে দু’টি নদীর সবকটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকে জেলার দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। উজানে টানা বর্ষণ হওয়ায় গতকাল সোমবার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যার কারণে জেলার ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৬১টি প্রাথমিক ও ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সিলেট জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার জানান, কুশিয়ারা অববাহিকায় ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর উপজেলার বন্যার পানি কিছুটা বেড়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় অপরিবর্তিত থাকলেও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন। জেলায় নয়টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৮৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ১৩৭ মেট্রিকটন চাল ও প্রায় তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের অভিযোগ, অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ত্রাণের আশায় পথ চেয়ে থাকলেও দেখা মিলছে না কারও।
দক্ষিণ সুরমার ১৪টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত: কুশিয়ারা নদীর পানির স্তর ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় ফলে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১৪টি গ্রামে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বাড়ির রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কয়েক হাজার গ্রামবাসীর। বন্যা কবলিত গ্রামগুলো হচ্ছে- মির্জানগর, মানিকপুর, ইনাত আলীপুর, রাউতকান্দি, সিকন্দরপুর, পানিগাঁও, রাখালগঞ্জ, খালোমুখ, ভাঙ্গি, জলকরকান্দি, পরাইরচক, মোল্লাগ্রাম, মোগলাবাজার, হাজীপুর। পানিবন্দি অবস্থায় অনেকে বসতবাড়িতেই অবস্থান করছেন। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না-থাকায় বৃষ্টি হলে বা কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে গ্রামের চলাচলের রাস্তাসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। নৌকায় করে চলাচল করতে হচ্ছে এই এলাকার মানুষকে। নোংরা পানি ও কাদা ঘেঁটে গন্তব্যে যাতায়াত করেন। এসব এলাকার মানুষজন ঘর থেকে বের হলেই নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলা তৈরি করে চলাচল করছেন। এদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে দক্ষিণ সুরমার গ্রামগুলোও বন্যাদুর্গত এলাকার মধ্যে রয়েছে।
মোল্লাগ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন- এভাবে যদি কুশিয়ারা নদীর পানি আরো দু-একদিন বাড়ে তাহলে আমাদের বাড়িঘরের ভেতরে পানি ঢুকে যাবে। তখন এলাকাবাসী বেকায়দায় পড়ে যাবে।
বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আজ আসছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী: বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আজ মঙ্গলবার সিলেট আসছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও সিলেট আসবেন। সিলেট এসে জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমেও অংশ নেবেন। বিষয়টি জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী। এদিকে, টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের সাত উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নতুন করে তলিয়ে গেছে কুশিয়ারা অববাহিকার আরও কিছু নিচু এলাকা। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে আছেন কয়েক লাখ মানুষ। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও বাড়ছে ভিড়।