সহকর্মীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিলেন হবিগঞ্জের ল্যান্সনায়েক সুমন

12

লালমনিরহাটের দহগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় গরু পাচাররোধ করতে গিয়ে তিস্তা নদীতে ডুবে নিহত হয়েছিলেন 89771বিজিবির ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়া। শুক্রবার তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ২৬ জুন ঈদের রাতে তার সহকর্মী ল্যান্স নায়েক টুটুল মিয়া নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে ভেবে তাকে উদ্ধারে গিয়ে সুমন মিয়া নিখোঁজ হন। পরে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশ থেকে ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে বিএসএফ।
ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়া হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে। ১৪ ভাই বোনের মাঝে সুমন ছিলেন খুব আদরের। সুমন ২০১২ সালে বিয়ে করলেও তার কোন সন্তান নেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। গত ২৭ জুন সকালে সুমনের বাড়িতে খবর আসে তিনি তিস্তা নদীতে নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন ঈদের রাতে দহগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টহল দল তিস্তা নদীর আবুলের চর এলাকায় চোরাকারবারিদের প্রতিহত করতে যান। টহল দলে ছিলেন ল্যান্স নায়েক টুটুল মিয়া, ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়া ও সিপাহী উচ্চ প্রু মারমা। আবুলের চর এলাকায় তিস্তা নদীর কিনারে চোরাকারবারিদের সঙ্গে গরু টানাটানির এক পর্যায়ে টুটুল মিয়াকে নদীতে নামানো হয়। চোরাকারবারিরা গরুর রশি ছেড়ে দিলে টুটুল মিয়া দুটি গরু নিয়ে চরে ফিরে আসছিলেন। টুটুল মিয়া তলিয়ে যাচ্ছে ভেবে তাকে উদ্ধারে সুমন মিয়া তিস্তা নদীতে নামেন। পরে টুটুল মিয়া তীরে উঠতে পারলেও সুমন মিয়া নিখোঁজ হন।
গত মঙ্গলবার ভোর থেকে তাকে উদ্ধারে বিজিবি, বিএসএফ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীতে অভিযান চালায়। ৩২ ঘণ্টা পর বুধবার সকাল ১০টার দিকে দহগ্রামের আবুলের চর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভাটিতে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশ থেকে ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে বিএসএফ। দুপুর ২টার দিকে ভারতের দরুন ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা সুমন মিয়ার লাশ হস্তান্তর করেন।
শুক্রবার সকাল ৮টায় তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আটঘরিয়ায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন এলাকার হাজারও মুসল্লী। পরে তাকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে বিজিবি শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের একদল সদস্য মরদেহ তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশীর কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
সুমনের লাশ এক নজর দেখতে রাত থেকেই শত শত মানুষ তার বাড়িতে ভীড় জমান। শুক্রবার সকাল ৭টায় বিজিবি সদস্যরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক, পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সুমনের মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। (খবর সংবাদদাতার)